জিওডেটিক ডিটাচমেন্ট (জিওডেসি) |
||||||||||||||
জিওডেসি হলো নেভিগেশন, ভূ-তাত্তিক, ভূ-বিজ্ঞান এবং প্রকৌশল বিজ্ঞানের একটি অংশ। এটি জাতীয় অর্থনীতি বিনির্মাণ, ভূ-বিজ্ঞান গবেষণা এবং সামাজিক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতি, জিওডেসিকে একটি যুগান্তকারী রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। ঐতিহ্যগত শাস্ত্রীয় জিওডেসির সাময়িক এবং স্থানিক সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে এটি আধুনিক জিওডেসির উন্নয়নে একটি নতুন ধারায় প্রবেশ করেছে। জিওডেসিতে জ্যামিতিক জরিপ এবং মানচিত্র প্রণয়নসহ পৃথিবীর পৃষ্ঠের সমস্ত ধরন অধ্যয়ন করা হয়। জিওডেসিতে পৃথিবীর আকার-আকৃতি, মাধ্যাকর্ষণ ক্ষেত্র অধ্যয়ন এবং পরিমাপ করা হয়।
পৃথিবীর পৃষ্ঠে একটি সার্বভৌম বিন্দুর সঠিক জ্যামিতিক অবস্থান দেখানোর জন্য একটি ইউনিফাইড কো-অর্ডিনেট সিস্টেম স্থাপন করা প্রয়োজন। এজন্য জিওডেটিক পরিমাপ টপোগ্রাফিক ম্যাপিংয়ের আগে করা প্রয়োজন হয়। জিওডেসি সূক্ষ নির্ভুলতা এবং রেজোলিউশন সহ তাৎক্ষণিক, গতিশীল এবং পরিমাণগত ভূ-স্থানিক এবং বাস্তব তথ্য সরবরাহ করে। এটি পৃথিবীর ঘূর্ণন, মাধ্যাকর্ষণ, জোয়ার, ভূত্বকের গতিবিধি এবং সমুদ্র পৃষ্ঠের পরিবর্তনগুলির মতো ভূ-গতিবিদ্যা সম্পর্কিত ঘটনা অধ্যয়নের একটি মাধ্যম হিসেবে কাজ করে।
জিওডেটিক ডিটাচমেন্ট, বাংলাদেশ জরিপ অধিদপ্তর (এসওবি) এর একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা। এটি প্রথম থেকেই সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাকে জিওডেটিক সেবা প্রদান করে আসছে এবং জাতীয় অবকাঠামোগত উন্নয়নে অবদান রাখছে।
|
||||||||||||||
জিওডেটিক ডিটাচমেন্ট এর দ্বায়িত্ব/ কার্যাবলীঃ
|
||||||||||||||
বাংলাদেশের জিওডেটিক কন্ট্রোল পয়েন্ট সমূহঃ
জিওডেটিক কন্ট্রোল পয়েন্টসমূহ সমূহ টপোগ্রাফিক ম্যাপিং, নেভিগেশন এবং প্রকৌশল সম্পর্কিত কাজগুলির নির্ভুলতা এবং নির্ভরযোগ্যতার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এসওবির জিওডেটিক ডিটাচমেন্ট, গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম (জিপিএস) এবং লেভেলিং প্রযুক্তির মাধ্যমে সারা দেশে জিওডেটিক কন্ট্রোল নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করেছে।
জিওডেটিক কন্ট্রোল পয়েন্টের তালিকাঃ
|
||||||||||||||
অনলাইনে জিওডেটিক ডাটা সার্ভিসঃ
|
||||||||||||||
সম্পূর্ণ জিওডেটিক কন্ট্রোল পয়েন্ট এলাকা
|
আংশিক জিওডেটিক কন্ট্রোল পয়েন্ট এলাকা
|
|||||||||||||
|
||||||||||||||
বাংলদেশের অনুভূমিক ডেটাম নির্ণয়ঃ
১৯৯০ সালের আগে গুলশান, ঢাকায় একটি জিওডেটিক কন্ট্রোল পয়েন্ট অস্থায়ী হরাইজন্টাল ডেটাম হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছিল, কিন্তু এর স্থানাঙ্কগুলির নির্ভুলতা যাচাই করা হয়নি, যার স্থানাঙ্ক ছিল এভারেস্ট-১৮৩০ এর সাপেক্ষে । যেহেতু জিপিএস ডব্লিউজিএস-৮৪ কো-অর্ডিনেট সিস্টেমে স্থানাংক দেয় তাই বাংলাদেশের কন্ট্রোল পয়েন্টগুলি এভারেস্ট-১৮৩০ কো-অর্ডিনেট এর সাপেক্ষে উপযুক্ত ছিলনা। ফলে ১৯৯৪ সালে গুলশান-এ পুরাতন কন্ট্রোল পয়েন্টটি সংস্কারের মাধ্যমে বাংলাদেশের জিওডেটিক হরাইজন্টাল ডেটাম প্রতিষ্ঠা করা হয় এবং এর স্থানাঙ্ক, চারটি আইজিএস স্টেশন ওয়েটজেল (জার্মানি), হার্টবেইসথোক (দক্ষিণ আফ্রিকা), ইয়ারাগেডি (অস্ট্রেলিইয়া) এবং সুকুবা (জাপান) এর সাপেক্ষে টানা ০৭ দিন জিপিএস পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে ডব্লিউজিএস-৮৪ কো-অর্ডিনেট সিস্টেমে নির্ণয় করা হয়।
|
||||||||||||||
এই ০৪ (চার) টি স্টেশন কেবল মাত্র ইন্টারন্যাশনাল জিএনএসএস সার্ভিস (আইজিএস) এর জন্য কন্টিনিউয়াসলি জিপিএস পর্যবেক্ষণ স্টেশন হিসাবেই কাজ করছে না, বরং ইহা ভেরী লং বেইসলাইন ইন্টারফেরোমেট্রি (ভিএলবিআই) সাইট অথবা স্যাটেলাইট লেজার রেঞ্জিং (এসএলআর) সাইট হিসাবেও কাজ করছে। ভিএলবিআই এবং এসএলআর সবচেয়ে সূক্ষ্মতম গ্লোবাল জিওডেটিক পর্যবেক্ষণ কৌশল, যা কয়েক মিলিমিটার সঠিকতার মধ্যে স্থানাঙ্ক নির্ণয় করে এবং বিশ্বব্যাপী জিওডেটিক রেফারেন্স সিস্টেম বজায় রেখে পরিচালনা করে। এর ফলে, এই স্টেশনগুলির স্থানাঙ্ক সবচেয়ে সঠিকভাবে নির্ণয় করা হয়। ১৯৯৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর হতে ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত টানা ০৭ (সাত) দিনের জিপিএস পর্যবেক্ষণ করা হয় এবং এই ডাটা ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি; ক্যালিফোর্নিয়া ও হাভার্ড বিশ্যবিদ্যালয়ের GAMIT Baseline বিশ্লেষণ সফট্ওয়্যার এবং GLOBK Network Adjustment সফট্ওয়্যার ব্যবহার করে জিওডেটিক ডিপার্টমেন্ট, জিএসআই, জাপান কর্তৃক প্রসেস করে ডেটামের মান নির্ণয় করা হয়। |
জাতীয় অনুভূমিক ডেটাম স্থাপন |
|||||||||||||
অন্যদিকে, প্রথম শ্রেণীর কন্ট্রোল পয়েন্ট জরিপের জন্য এভারেস্ট-১৮৩০ এর সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য স্থানাঙ্কগুলি জিপিএস ডাটা ব্যবহার করে পরীক্ষা করা হয়েছিল। জিপিএস নেটওয়ার্কে ২৪ (চব্বিশ)টি বিদ্যমান পুরনো পিলার অন্তর্ভুক্ত ছিল, যাদের স্থানাঙ্ক এভারেস্ট-১৮৩০ কো-অর্ডিনেট সিস্টেমে ছিল। পুরনো স্থানাঙ্কগুলির নির্ভরযোগ্যতা যাচাই করার জন্য ২৪ (চব্বিশ) টি পুরনো পিলারের মধ্যে ১৯ (ঊনিশ) টি পিলার ব্যবহার করে ফ্রি নেটওয়ার্ক সমন্বয় কৌশল দ্বারা নেটওয়ার্কটি সমন্বয় করা হয়েছিল। ফলস্বরূপ, এই সমন্বয়ের স্থানাঙ্কগুলি "পুরাতন" এভারেস্ট -১৮৩০ স্থানাঙ্ক হিসেবে গৃহীত হয়েছিল।
|
||||||||||||||
ভিত্তিপ্রস্তর |
বাংলাদেশের ন্যাশনাল জিওডেটিক হরাইজনটাল ডেটাম |
|||||||||||||
অবশেষে, ডব্লিউজিএস-৮৪ এবং "পুরাতন" এভারেস্ট-১৮৩০ এর সমন্বয় করে এবং ০২ (দুই)টি কো-অর্ডিনেট সিস্টেমের ট্রান্সফরমেশন প্যরামিটার ব্যবহার করে উক্ত ডেটামের স্থানাংক বের করা হয়। |
||||||||||||||
জিএনএসএস (গ্লোবাল নেভিগেশন স্যাটেলাইট সিস্টেম) জরিপঃ
বাংলাদেশ জরিপ অধিদপ্তরের জিওডেটিক ডিটাচমেন্ট ১৯৯৪ সাল থেকে জিএনএসএস/ জিপিএস জরিপ পরিচালনা করছে। জিএনএসএস / জিপিএস জরিপ দ্বারা সারাদেশে হরাইজন্টাল জিওডেটিক কণ্ট্রোল পয়েন্ট নেটওয়ার্ক স্থাপন করা হয় এবং এদের স্থানাঙ্কগুলি ডব্লিউজিএস-৮৪ কো-অর্ডিনেট সিস্টেমে বের করা হয় ।
|
||||||||||||||
হরাইজন্টাল কন্ট্রোল নেটওয়ার্ক
|
জিপিএস অবজারবেশন |
|||||||||||||
যে কোনো সরকারি / বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহ এবং অন্যান্য এনজিওগুলো এসওবি এর ওয়েব সাইটের মাধ্যমে হরাইজন্টাল কন্ট্রোল নেটওয়ার্ক সম্পর্কে জানতে পারেন এবং ডাটা পেতে এসওবি এর ওয়েব সাইটের মাধ্যমে অনলাইনে আবেদন করার পর সরকার নির্ধারিত মূল্য পরিশোধ করতে হয়।
|
||||||||||||||
গড় সমুদ্র সমতল (এমএসএল) এর সাপেক্ষে বাংলদেশে ভার্টিকেল কন্ট্রোল নেটওয়ার্ক স্থাপনঃ
১৯৯০ সালের আগে এসওবি এর নিজস্ব এমএসএল এর উচ্চতা ছিলনা, তাই বাংলাদেশ জরিপ অধিদপ্তর ভারতে অবস্থিত পুরাতন এমএসএল এর সাপেক্ষে উচ্চতা ব্যবহার করেছে । জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)- এর মাধ্যমে জাপান সরকারের প্রযুক্তিগত সহায়তায় বাংলাদেশ জরিপ অধিদপ্তরের সাথে একটি প্রকল্পের অধীনে ১৯৯২-১৯৯৪ সালে প্রথম শ্রেণীর লেভেলিং নেটওয়ার্ক স্থাপন করা হয়।
|
||||||||||||||
ভিত্তি প্রস্তর |
জাতীয় ভার্টিকেল ডেটাম, গুলশান, ঢাকা |
বাংলাদেশের জাতীয় জিওডেটিক ভার্টিকেল ডেটাম |
||||||||||||
সেই সময় বাংলাদেশ জরিপ অধিদপ্তর চট্রগ্রামের রাঙ্গাদিয়াতে একটি টাইডাল পর্যবেক্ষণাগার এবং ঢাকার গুলশানে একটি জাতীয় ভার্টিকেল ডেটাম স্থাপন করে এবং উপকূলীয় ও পাহাড়ী অঞ্চলের জেলাসমূহ বাদে দেশের ৭০% এলাকা জুড়ে প্রায় ২৩৮৬ কিলোমিটার প্রথম শ্রেণীর লেভেলিং এর মাধ্যমে ৪৬৫-টি বেঞ্চমার্ক (বিএম) স্থাপন করে।
পরবর্তীতে ২০০১-২০০৪ সাল পর্যন্ত বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্প (এডিপি) এর অধীনে বাংলাদেশ জরিপ অধিদপ্তর জিওডেটিক লেভেলিং জরিপের মাধ্যমে দেশের উপকূলীয় ও পাহাড়ী অঞ্চলের জেলাসমূহে ভার্টিকেল কন্ট্রোল নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ করে।
১৯৯২ সালে বাংলাদেশের গড় সমুদ্র সমতল (এমএসএল) নির্ণয়ের জন্য চট্রগ্রামের রাঙ্গাদিয়ায় কর্ণফুলী নদীর মোহনায় চট্রগ্রাম সার কারখানা লিমিটেড (সিউএফএল) এবং কর্ণফুলী সার কোম্পানি (কেএএফসিও)-এর জেটিদ্বয়ের মধ্যে টাইডাল স্টেশন স্থাপন করা হয়। গড় সমুদ্র সমতল নির্ণয় এবং টাইড পর্যবেক্ষণের জন্য ১৯৯৩ সালের জানুয়ারী হতে টাইডাল উপাত্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে। ডিজিটাল রেকর্ডিং সিস্টেম এবং অ্যানালগ রেকর্ডিং সিস্টেম এই ০২ (দুই) পদ্ধতিতে জোয়ার-ভাটার তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। তথ্য পিসিএমসি কার্ডে সংগ্রহ করা হয় এবং প্রক্রিয়াকরণ ও মুদ্রণের জন্য একটি কম্পিউটারে ডাউনলোড করা হয়। প্রতি ০৬ (ছয়) সেকেন্ড অন্তর অন্তর এই ডাটা সংগৃহীত হচ্ছে। অ্যানালগ সিস্টেমে ও গ্রাফ কাগজ গণনা দ্বারা ডাটা সংগৃহীত হচ্ছে। এই গ্রাফিক্যাল ডাটা ডিজিটাল ডাটার সঙ্গে তুলনা করা হয়। ডাটা সংগ্রহ করার পরে এটি এক্সেল এ রুপান্তরিত করা হয় এবং কম্প্যাক্ট ডিস্কে সংরক্ষণ করা হয়। বাংলাদেশ জরিপ অধিদপ্তরের গড় সমুদ্র সমতল গণনার জন্য প্রতি ঘন্টার উপাত্ত ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও বাংলাদেশ জরিপ অধিদপ্তর প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন ব্যবহারকারীদের প্রতি ০৬ (ছয়) সেকেন্ড অন্তর এবং প্রতি ঘন্টার টাইডাল ডাটা (হার্ড ও সফট কপি) সরবরাহ করে থাকে।
|
||||||||||||||
বার্ষিক গড় সমুদ্র সমতল (এমএসএল):
মাসিক উপাত্তের গড়ের মাধ্যমে বার্ষিক গড় সমুদ্র সমতল (এমএসএল) গণনা করা হয়, এক মাসের দৈনিক উপাত্তের গড় করে মাসিক গড় সমুদ্র সমতল (এমএসএল) গণনা করা হয়, দিনে ২৪ (চব্বিশ) ঘন্টার গড় করে দৈনিক গড় সমুদ্র সমতল (এমএসএল) গণনা করা হয়।
|
||||||||||||||
টাইডাল স্টেশন, রাঙ্গাদিয়া, চট্টগ্রাম |
টাইডাল স্টেশন, রাঙ্গাদিয়া, চট্টগ্রাম |
ডিজিটাল ফুস টাইপ টাইড গেজ |
||||||||||||
২০০৭ সালের জুন থেকে এটি আন্তর্জাতিক গ্লোবাল সমুদ্র পৃষ্ঠ পর্যবেক্ষণ পদ্ধতির মাধ্যমে ইউনেস্কোর আর্ন্তজাতিক মহাসাগরীয় কমিশনের অধীনে ভারত মহাসাগর সুনামি সতর্ককরণ ব্যবস্থায় অর্ন্তভূক্ত হয়। এজন্য এই টাইডাল পর্যবেক্ষণাগার-টি জাতীয় এবং আর্ন্তজাতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি গড় সমুদ্র সমতল (এমএসএল) নিরুপন এবং পর্যবেক্ষনের জন্য একমাত্র টাইডাল স্টেশন এবং এটি গ্লোবাল সি লেভেল অবজারভেশন পদ্ধতির সাথে সম্পর্কিত।
যে কোনো সরকারি / বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহ এবং অন্যান্য এনজিওগুলো বাংলাদেশ জরিপ অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অনলাইনে অথবা সরাসরি সংশ্লিষ্ট অফিস/শাখা/ইউনিট -এ আবেদন করে টাইডাল স্টেশন এর তথ্য-উপাত্ত পেতে পারে, তবে এর জন্য সরকার নির্ধারিত মূল্য পরিশোধ করতে হবে।
|
||||||||||||||
লেভেলিং জরিপঃ
লেভেলিং এমন একটি পদ্ধতি যা ০২ (দুই) টি পয়েন্টের মধ্যে উচ্চতার পার্থক্য সঠিকভাবে নির্ণয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়। লেভেলিং এর মূলনীতি হল, দুটি পয়েন্টের উপর ভার্টিকেলভাবে দুটি লেভেলিং স্টাফ স্থাপন করা হয় যাদের উচ্চতার পার্থক্য নির্ণয় করা হয় এবং হরাইজন্টাল লাইন অব সাইটের মাধ্যমে স্টাফ দুটির স্কেল রিডিং নেওয়া হয়। দুটি রিডিংয়ের মধ্যে পার্থক্যই দুটি পয়েন্টের মধ্যে উচ্চতার পার্থক্য হবে।
একটি লেভেল মেশিন দ্বারা একটি নির্দিষ্ট বিএম থেকে লেভেলিং কাজ শুরু করা হয় এবং আবার ঐ একই বিএম -এ লেভেলিং শেষ করা হয়, একে লেভেল লুপ বলে। একটি লেভেল লাইন যখন একটিতে শুরু হয়ে একই বিএম এ শেষ না হয়, তাকে একটি লেভেল লাইন বলা হয়। একটি লেভেল লাইন যখন অন্য বিএম -এ শেষ হয়ে যায়; কিন্তু যখন একটি লেভেল লাইন তার অরিজিনে ফিরিয়ে আনা হয়, তখন এটি একটি লেভেল লুপে পরিণত হয়। সাধারনত, একটি লেভেল লাইনকে তার প্রাথমিক বিএম-এ ফেরত নেওয়া হয়, ঐ দুইটি পয়েন্টের মধ্যে লোপ ত্রুটি নির্নয় করার জন্য। লোপ ত্রুটি হল প্রাথমিক বিএম-এর জানা উচ্চতা এবং লেভেল রান -এ নির্ণয় করা একই (বিএম) এর উচ্চতার মধ্যে পার্থক্য। প্রথম, দ্বিতীয় বা তৃতীয় শ্রেণীর উপর ভিত্তি করে লোপ ত্রুটির গ্রহনযোগ্রতা নির্ধারণ করা হয়। নিখুঁত লেভেলিং এর মিলন ভ্রান্তির অনুমোদনযোগ্য ত্রুটি একটি সহগ এবং প্রকৃত পথের অনুভূমিক দৈর্ঘ্যের বর্গমূলের ভিত্তিতে প্রকাশ করা হয় যার উপর লেভেলিং করা হয়েছিল।
জিওডেটিক ডিটাচমেন্ট মূলত ভার্টিক্যাল কন্ট্রোল পয়েন্ট স্থাপনের জন্য উচ্চ নির্ভূলতার লেভেলিং জরিপ পরিচালনা করে।
|
||||||||||||||
ভার্টিকেল কন্ট্রোল নেটওয়ার্ক
|
আনুমানিক মোট লেভেলিং দৈর্ঘ্যঃ ১৭৩৬৩ কিঃমিঃ
আনুমানিক মোট প্রথম শ্রেণীর লেভেলিং লাইনঃ ৩৮০০ কিঃমিঃ
এবং আনুমানিক মোট দ্বিতীয় অর্ডার লেভেলিং লাইনঃ ১৩৫৬৩ কিঃমিঃ
যে কোনো সরকারি/এনজিও এবং অন্যান্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহ বাংলাদেশ জরিপ অধিদপ্তরের ওয়েব সাইটের মাধ্যমে ভার্টিক্যাল কন্ট্রোল নেটওয়ার্ক সম্পর্কে জানতে পারেন এবং ডাটা পেতে অত্র অধিদপ্তরের ওয়েব সাইটের মাধ্যমে অনলাইনে আবেদন করে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত মূল্য পরিশোধ করতে হয়। |
|||||||||||||
বাংলাদেশের জিওড মডেল:
জিওডেসির অন্যতম প্রধান কাজ হল জিওড হাইট নির্ণয় করণ, যা পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ ক্ষেত্রের সমতুল্য পৃষ্ঠকে বোঝায়, যা গড় সমুদ্রপৃষ্ঠের সাথে মিলে যায়। জিওডের মৌলিক ভূমিকা হল পৃথিবীর আকৃতি উপস্থাপন করা এবং ভার্টিক্যাল রেফারেন্স পৃষ্ঠ হিসেবে কাজ করা। অর্থোমেট্রিক উচ্চতা এবং জিএনএসএস পর্যবেক্ষিত ইলিপসয়ডাল উচ্চতার মধ্যে পার্থক্যকে বলা হয় জিওড উচ্চতা বা আনডুলেশন। যদি জিওড উচ্চতা সর্বত্র জানা থাকে, তাহলে জিপিএস হতে প্রাপ্ত ইলিপসয়ডাল উচ্চতাটিকে কেবল জিওডের উচ্চতা থেকে বিয়োগ করে অর্থোমেট্রিক উচ্চতায় রূপান্তরিত করা যেতে পারে। সুতরাং, জিওড মডেল থাকাটা খুবই গুরুত্বপূর্ন যা একটি নির্দিষ্ট এলাকা বা সমগ্র পৃথিবীর জন্য জিওড উচ্চতার গাণিতিক উপস্থাপনা।
বাংলাদেশ জরিপ অধিদপ্তরের জিওডেটিক ডিটাচমেন্ট জিওডেটিক কন্ট্রোল পয়েন্ট এবং গ্লোবাল আর্থ গ্র্যাভিটেশনাল মডেল (ইজিএম-২০০৮) ব্যবহার করে একটি প্রাথমিক জিওড মডেল তৈরি করেছে। |
|
|||||||||||||
বাংলাদেশের স্থায়ী জিএনএসএস কোর্স নেটওয়ার্ক:
জিএনএসএস কোর্স হলো গ্লোবাল নেভিগেশন স্যাটেলাইট সিস্টেম কন্টিনিওয়াসলি অপারেটিং রেফারেন্স স্টেশন এর সংক্ষিতরুপ। এটি একটি আধুনিক টেকনোলজি যার সাহায্যে সামগ্রিকভাবে আমিরিকান জিপিএস, রাশিয়ান গ্লোনাস, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের গ্যালিলিও, চায়নার বেইদুসহ অন্যান্য নেভিগেশন স্যাটেলাইট সিস্টেম এর সিগন্যাল সমূহ ব্যবহার করে প্রিসাইজ পজিশনিং, সময় এবং গতি পাওয়া যায়। জিএনএসএস কোর্স নেটওয়ার্ক হচ্ছে প্রিসাইজ পজিশনিং এবং নেভিগেশনের মূল অবকাঠামো। জিএনএসএস কোর্স নেটওয়ার্কের মতো আধুনিক ডিজিটাল প্রযুক্তি প্রিসাইজ পজিশনিং এর মাধ্যমে কার্যকরভাবে পৃথিবীর ভূত্বকের গতিবিধি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ এবং ভবিষ্যতের বিপদের পূর্বাভাস দিতে সক্ষম । জিএনএসএস কোর্স নেটওয়ার্ক স্থাপনের ফলে দ্রুত দুর্যোগ প্রস্তুতি এবং পদক্ষেপ গ্রহনকে সহজতর করার লক্ষ্যে ভূমিকম্প ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার পূর্বাভাস গ্রহনে সাহায্য করে। এটি ইন্টারনেটের মাধ্যমে জিএনএসএস রেফারেন্স ডেটা এবং সংশোধন ডেটা প্রদান করে রিয়েল টাইমে এবং পোস্ট প্রসেসিং এর মাধ্যমে জিএনএসএস ব্যবহারকারীদের সঠিক অবস্থানের তথ্য প্রদান করে। জিএনএসএস কোর্স নেটওয়ার্ক জিওডেটিক কন্ট্রোল পয়েন্টগুলিকে সুনির্দিষ্টভাবে হালনাগাদ করতে সাহায্য করে এবং টপোগ্রাফিক এবং ক্যাডাস্ট্রাল জরিপ কাজ এবং উন্নয়নমূলক কাজে উল্লেখযোগ্যভাবে অবদান রাখে।
|
||||||||||||||
স্থায়ী জিএনএসএস স্টেশন |
জিএনএসএস নেটওয়ার্ক |
জিএনএসএস কোর্স নেটওয়ার্ক |
||||||||||||
বর্তমানে বাংলাদেশ জরিপ অধিদপ্তরের ০৬ (ছয়) টি জিএনএসএস কোর্স স্টেশন রয়েছে । এগুলো ২০১১ সালে জাইকার সহায়তায় ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, রংপুর এবং মৌলভীবাজারে স্থাপন করা হয়। রিয়েল টাইম জিএনএসএস জরিপের জন্য প্রতিটি জিএনএসএস কোর্স-এর বিস্তৃতি ৩০ (ত্রিশ) কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে রাখা প্রয়োজন। বাংলাদেশ জরিপ অধিদপ্তর সরকারী, আধা-সরকারি, বেসরকারী সংস্থা এবং একাডেমিক প্রতিষ্ঠানসমূহকে রিয়েল টাইম জিএনএসএস পরিসেবা প্রদান করছে। সমগ্র দেশে চলমান বিশাল উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কারণে রিয়েল টাইম জিএনএসএস পরিসেবার চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু দেশের অন্যান্য এলাকায় জিএনএসএস কোর্স না থাকার কারণে সেসব এলাকার উন্নয়ন কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে এবং সমগ্র দেশকে জিএনএসএস কোর্স এর নেটওয়ার্কের আওতায় আনার জন্য বাংলাদেশ জরিপ অধিদপ্তর কর্তৃক " জিএনএসএস কোর্স-এর নেটওয়ার্ক পরিধি সম্প্রসারণ এবং টাইডাল ষ্টেশন আধুনিকীকরণ” নামে একটি প্রকল্প চলমান রয়েছে। প্রকল্পের সামগ্রিক উদ্দেশ্য হল, বাংলাদেশের জিএনএসএস কোর্স নেটওয়ার্ক স্থাপন করা যা মূলত ৭৩ (তেহাত্তর) টি জিএনএসএস কোর্স স্টেশনের জন্য বাংলাদেশের ৭৩ (তেহাত্তর) টি বিভিন্ন স্থানে ডিজিটাল যন্ত্রপাতি ব্যাবহার করে স্টেশন তৈরি করা এবং বাংলাদেশ জরিপ অধিদপ্তরে ঢাকায় একটি ডেটা সেন্টার (সার্ভার) স্থাপন করা। এর ফলে বাংলাদেশের যে কোন স্থানে রিয়াল টাইম রিসিভারের মাধ্যমে খুব অল্প সময়ে প্রিসাইজ পজিশনিং এবং নেভিগেশন সম্ভব হবে।
|
||||||||||||||
জিএনএসএস কোর্স স্টেশনের উদ্দেশ্যঃ
|
প্রস্তাবিত GNSS CORS এর অবস্থান |
|||||||||||||
পরিষেবা সরবরাহের ক্ষেত্রে এই প্রকল্পের উদ্দেশ্যগত প্রভাব সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা বাড়াবে। এই প্রকল্প থেকে কিছু প্রত্যাশিত সুবিধা পাওয়া যাবে যা নিম্নরূপ:
|
||||||||||||||
|
|
|||||||||||||
সর্বোপরি বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে তথা সামগ্রিক অবকাঠামো উন্নয়নে এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মানে জিএনএসএস কোর্স ষ্টেশন সমুহ অগ্রনী ভুমিকা পালন করতে সহায়ক হবে।
|